Table of Contents
জীবাণু
পৃথিবীতে জীবনের বিশাল ট্যাপেস্ট্রিতে একটি সমগ্র মহাবিশ্ব বিদ্যমান যা খালি চোখে এড়িয়ে যায় – জীবাণুর মন্ত্রমুগ্ধ জগত। প্রায়শই উপেক্ষা করা এবং অবমূল্যায়ন করা এই ক্ষুদ্র জীবগুলি আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্র গঠনে, মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে এবং এমনকি বিশ্বব্যাপী জৈব-রাসায়নিক চক্রকে প্রভাবিত করতে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলে, জীবাণু, জীবাণুর সংজ্ঞা, প্রকার এবং গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জীবাণুর সংজ্ঞা
1676 খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডের বিজ্ঞানী লিভেনহিক(Leeuwenhoek) নিজের তৈরী অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সর্বপ্রথম জীবাণুর অস্তিত্ব প্রমান করেন। অতিক্ষুদ্র,আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয়।
- মাটিতে বসবাসকারী জীবাণু: অ্যাজাটোব্যাক্টর,ক্লসট্রিডিয়াম,নাইট্রোসোমনাস,নাইট্রব্যাক্টর ইত্যাদি।
- জলে বসবাসকারী জীবাণু: ভিব্রিও কলেরি,সালমোনেলা টাইফি ,এন্টামিবা ইত্যাদি।
- বায়ুতে বসবাসকারী জীবাণু: মাইক্রোকক্কাই ,অ্যাকটিনমাইসেটিস ইত্যাদি জীবাণু বাতাসে প্রায় 22000ফুট উঁচুতে ভেসে বেড়াতে পারে
মানবদেহে বসবাসকারী জীবাণু
- চর্মে:স্ট্রেপটোকক্কাই,স্ট্যাফিলোকোক্কাই।
- মুখ -বিবরে -স্ট্রেপটোকক্কাই,ডিপলোকক্কাই,মাইক্রোকক্কাস।
- শ্বাসনালীতে-নিউমোকক্কাই,করনি ব্যাকটিরিয়াম,ডিপথেরি।
- অন্ত্রে:সালমোনেলা টাইফি,এন্টামিবা হিস্টোলাইটিক।
- রক্তে:প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স।
জীবাণুর প্রকার
1.ব্যাকটেরিয়া(Bacteria): সুগঠিত নিউক্লিয়াসবিহীন,কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট,সাধারণত ক্লোরোফিলবিহীন,এককোষী ও সরল আণুবীক্ষণিক জীবদের ব্যাকটেরিয়া বলে।
2.ছত্রাক(Fungi):ক্লোরোফিলবিহীন এবং পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদের ছত্রাক বলে।ইস্ট ,পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি উপকারী ছত্রাক এ.বং পাকসিনিয়া,ফাইটপথোরা ইত্যাদি অপকারী ছত্রাক।
3.শৈবাল(Algae):ক্লোরোফিলযুক্ত,স্বভোজী ও সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদের শৈবাল বলে।
নীলাভ -সবুজ শৈবাল বায়ু থেকে নাইট্রোজেন শোষণ করে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে।
4.প্রোটোজোয়া(Protozoa):এককোষী সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াসযুক্ত আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলে। প্লাসমোডিয়াম,এন্টাবিমা,লিসমেনিয়া,জিয়ারডিয়া ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া।
5.অ্যাকটিনোমাইসিটিস(Actinomycetes):এরা প্রকৃত নিউক্লিয়াস বিহীন এবং ছত্রাকের মোট গঠন সম্পন্ন আণুবীক্ষণিক একরকম জীব। এই রকম জীবাণু অনেক সময় গলা ,চর্ম ,ফুসফুস,চক্ষু ইত্যাদিতে নানারকম রোগ সৃষ্টি করে।
6.স্পাইরাকিটিস(Spirochaetes):এরা পেঁচালো,ফ্লাজেলাবিহীন,নিউক্লিয়াসবিহীন,কোষপ্রাচীরবিহীন ;চলনে সক্ষম ,ব্যাক্টেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার অন্তবর্তী এক রকমের জীবাণু। এই জাতীয় জীবাণু থেকে সিফিল , রিল্যাপসিং জ্বর ইত্যাদি রোগ হয়।
7.ক্রিকেটসি(Rickettsiae): এরা কোষ প্রাচীরবিহীন,নিউক্লিয়াস বিহীন,গোলাকার ,দণ্ডাকার বা সূত্রাকার ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার অন্তর্বর্তী এক রকমের জীবাণু।এই জীবাণু টাইফয়েড নামক রোগ সৃষ্টি করে।
8.মাইকোপ্লাজম(Mycoplasma): এরা কোষ প্রাচীরবিহীন ,নিউক্লিয়াসবিহীন অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার অন্তবর্তী এক রকমের জীবাণু। এই ধরণের জীবাণু গবাদি পশুর দেহে প্লুরোনিউমোনিয়া নামক রোগ সৃষ্টি করে।
পরিবেশগত গুরুত্ব
এই মাইক্রোস্কোপিক জীবগুলি আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্রের অজ্ঞাত নায়ক হিসাবে কাজ করে। মাটিতে, তারা জৈব পদার্থের পচন এবং নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মুক্তিতে সহায়তা করে, পুষ্টির সাইকেল চালানোর সুবিধা দেয়। জলজ পরিবেশে জীবাণুগুলি জলের গুণমান বজায় রাখতে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন জলজ জীবনকে সমর্থনকারী খাদ্য জালের সাথে অবিচ্ছেদ্য।
অধিকন্তু, জীবাণু এবং বৃহত্তর জীবের মধ্যে সিম্বিওটিক সম্পর্ক প্রকৃতিতে সর্বব্যাপী। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম থেকে শুরু করে, মানুষের হজম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, উদ্ভিদের শিকড়ে নাইট্রোজেন-ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত, এই অংশীদারিত্বগুলি জীবন গঠনের আন্তঃসংযুক্ততা এবং পরস্পর নির্ভরতাকে তুলে ধরে।
Adda247 ইউটিউব চ্যানেল – Adda247 You Tube Channel
Adda247 টেলিগ্রাম চ্যানেল – Adda247 Telegram Channel