Bengali govt jobs   »   পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল   »   পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপ

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপ, মানচিত্রে ভূমিরূপগুলির বিন্যাস- (Geography Notes)

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপ

ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের একটি বৈচিত্র্যময় এবং অনন্য ভূমিরূপ রয়েছে যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যকে ধারণ করে। উত্তরে শক্তিশালী হিমালয় থেকে দক্ষিণে উর্বর গাঙ্গেয় সমভূমি পর্যন্ত রাজ্যটিতে বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অবদান রাখে। একমাত্র মরু অঞ্চল ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে সবরকমের ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে ভূমিরূপগুলির বিন্যাস

ভূ -প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ভূমির গঠন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গকে তিনটি প্রধান ভূ -প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যথা-উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল , পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল এবং গঙ্গার বদ্বীপসমূহ সমভূমি অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে ভূমিরূপগুলির বিন্যাস
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে ভূমিরূপগুলির বিন্যাস

1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

অবস্থান: পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয় অবস্থান করছে । সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালার অংশ বিশেষ পর্বতময় এই অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পশ্চিম সিমান্তে পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির উপর অবস্থিত । একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পুরো দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্বের সামান্য কিছু অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত ।

ভূপ্রকৃতি: এই পার্বত্যভূমি তরাই-এর সমভূমি থেকে 300 মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর হঠাৎ খাড়াভাবে উপরে উঠে গিয়েছে (সমান উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলকে যে রেখা দিয়ে যুক্ত করা হয় তাকে সমোন্নতি রেখা বলা হয়)।

প্রধানত পাললিক ও রূপান্তরিত শিলা দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বন্ধুর। এবড়ো-খেবড়ো পার্বত্যভূমি, পাহাড়ের খাঁড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত এবং ছুরির ফলার মতো পর্বতশিরা এই অঞ্চলের প্রধান ভুপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

হিমালয় পর্বতের কয়েকটি গিরিশ্রেণি এবং উপত্যকা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকের ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে । তিস্তা নদী সিকিম থেকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে সুগভীর গিরিখাত দ্বারা এই অঞ্চলটিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে, যেমন— (1) তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চল এবং (2) তিস্তার পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল। তিস্তার পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় উঁচু ।

(1) তিস্তা নদীর পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চল : তিস্তা নদীর পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চলে দুইটি পর্বতশিরা দেখা যায়, এরা হল সিংগালীলা এবং দার্জিলিং-মহালধিরাম শৈলশিরা। সিংগালিলা শৈলশিরা নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সিংগালিলার চারটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল ফালুট,সান্দাকফু,টংলু ও সবরগ্রাম। ফালুট পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা 3595 মি. , সান্দাকফু পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা 3630 মি., টংলু পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা 3036 মি., ও সবরগ্রাম পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা 3543 মি.। সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। দার্জিলিং-কার্শিয়াং পর্বতমালার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ হল টাইগার হিল। টাইগার হিলের উচ্চতা 2567 মি.।

(2) তিস্তা নদীর পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল: তিস্তার পূর্বদিকে রয়েছে দুরবিনদারা পর্বত। এই পর্বতটি কালিম্পং শহর এর ঢালে অবস্থিত। কালিম্পং থেকে দুরবিনদারা পর্বতটি ক্রমশ নীচু হয়ে পূর্বদিকে জলঢাকা নদীর উপত্যকার দিকে এগিয়ে গেছে । এই অঞ্চলে দার্জিলিং হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ঋষিলা অবস্থিত। ঋষিলা শৃঙ্গের উচ্চতা 3,130 মি.। ঋষিলা শৃঙ্গের আরও পূর্বদিকে জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর অংশে ডলোমাইট শিলায় গঠিত নাতিউচ্চ বস্কা-জয়ন্তী পাহাড় অবস্থিত । এই অঞ্চলটি অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন পাহাড়ে পরিণত হয়েছে ।

পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ সমূহ

 

পর্বতশৃঙ্গ

উচ্চতা (ফুট) উচ্চতা (মিটার)
সান্দাকফু 3636 11929
ফালুট 3600 11811
সাবারগ্রাম 3543 11624
রাচেলা ডান্ডা 3170 10400
টংলু 3036 9960
টাইগার হিল 2600 8530
ঘুম হিল 2400 7870
ডেলো হিল 1704 5590
বক্সা হিল 1400 4593
দুরপিন হিল 1372 4501
গোর্গাবুরু 855 2805

পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য পর্বত সমূহ

পর্বত উচ্চতম চূড়া উচ্চতা (মিটার) পর্বত মালা জেলা
সিংগালীলা পর্বতশ্রেণী সান্দাকফু 3636 হিমালয় দার্জিলিং
দার্জিলিং-কার্শিয়াং রেঞ্জ টাইগার হিল 2600 হিমালয় দার্জিলিং
চোলা রেঞ্জ ডেলো হিল 1704 হিমালয় দার্জিলিং
বক্সা-জয়ন্তী রেঞ্জ বক্সা হিল 1400 হিমালয় আলিপুরদুয়ার

2. পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পুরুলিয়া, বীরভূমের পশ্চিমাংশ, বর্ধমান,বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নিয়ে পশ্চিমের মালভুমি অঞ্চল অবস্থিত। এই মালভূমি ছোট ছোট পাহাড় দ্বারা গঠিত। এগুলির স্থানীয় নাম দুংরি বা টিলা। অযোধ্যা এবং বাঘমুন্ডি পুরুলিয়ার প্রধান দুটি পাহাড়। বীরভূমের বক্রেশ্বরে উষ্ণপ্রস্রবন আছে। এছাড়াও বীরভূমের খাইরল ও মহম্মদ বাজারে কিছু আর্টেজিও কূপ দেখা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য পাহাড় সমূহ

পাহাড় অবস্থান
 অযোধ্যা (677মি) পুরুলিয়া
বাঘমুন্ডি পুরুলিয়া
পাঞ্ছেত (634মি) পুরুলিয়া
ভান্ডারি পুরুলিয়া
পরশ পুরুলিয়া
রঘুনাথপুর পুরুলিয়া
 জয়চন্ডি পুরুলিয়া
গুরুমা পুরুলিয়া
মামা-ভাগ্নে বীরভূম
মথুরখালি বীরভূম
শুশুনিয়া (442মি) বাঁকুড়া
বিহারীনাথ (435মি) বীরভূম
মশক বীরভূম
কোড়ো বীরভূম
বেল পাহাড়ী পশ্চিম মেদিনীপুর
ঠাকুরান পশ্চিম মেদিনীপুর

3. গঙ্গার বদ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলকে বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্থানই বৈচিত্র্যহীন সমভূমি। পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলটি নদীবাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে গড়ে উঠেছে। ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার পার্থক্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি অঞ্চলকে ছয়ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (1) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, (2) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, (3) রাঢ় অঞ্চল, (4) উপকূলের বালুকাময় সমভূমি (5) গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল ও (6) সুন্দরবন অঞ্চল।

 

 (1) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল 

তরাই কথার অর্থ স্যাঁতসেঁতে ভূমি।উত্তরবঙ্গে তিস্তা নদী এই অংশকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। সমগ্র ডুয়ার্সকে সংকোশ নদীর প্রবাহ পথের বিচারে দুই ভাগে ভাগ করা যায় –

(i) পূর্ব ডুয়ার্স বা অসম ডুয়ার্স   সংকোশ নদীর পূর্ব অংশ (ধুবড়ি, কোকড়াঝাড়, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলার অংশবিশেষ)

(ii) পশ্চিম ডুয়ার্স বা পশ্চিমবঙ্গ ডুয়ার্স   সংকোশ নদীর পূর্ব অংশ (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার অংশবিশেষ)

(2) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল

এটি তরাই এর দক্ষিণাংশ টি গঙ্গার উত্তর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।

বরেন্দ্রভূমি ও দিয়ারার মধ্যে পার্থক্য নিন্মে আলোচনা করা হল –

বরেন্দ্রভূমি

মহানন্দা নদীর পূর্বদিকের প্রাচীন সমভূমিকে বরেন্দ্রভূমি বলে। মহানন্দা নদীর বামতীরে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পূর্বাংশে অবস্থিত। মৃত্তিকা অনুর্বর হয়ে পরে। মাঝে মাঝে উঁচু ঢিবি দেখা যায় ।

দিয়ারা

মালদহ জেলার নবীন পলিযুক্ত মৃত্তিকা অঞ্চলকে দিয়ারা বলে। মালদহ জেলার কালিন্দি নদীর দক্ষিনাংশে নবীন পলি হিসাবে অবস্থিত। মৃত্তিকা উর্বর ও সমৃদ্ধ। প্রধানত সমতল প্রকৃতির।

তাল

মহানন্দা ও কালিন্দী নদীর মধ্যবর্তী বন্যা কবলিত এলাকা। এই বন্যার ফলে হ্রদ বা জলাভূমির সৃষ্টি হয় যা তাল নামে পরিচিত।

(3) রাঢ় অঞ্চল

পশ্চিমের মালভূমির পূর্ব সীমা থেকে ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত সামান্য ঢেউ খেলানো ও পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলটি রাঢ় সমভূমি নামে পরিচিত। রাঢ় অঞ্চলের গড় উচ্চতা 30-35 মিটার । পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বীরভূম জেলার পূর্বাংশ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। পুরানো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির মাটির রঙ লাল। এখানকার মাটি ল্যাটেরাইট প্রকৃতির। তাই এই মাটির রং লাল। এখানকার জমির স্বাভাবিক ঢাল পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, শিলাবতী, কংসাবতী, বক্রেশ্বর প্রভৃতি হল রাঢ় অঞ্চলের প্রধান নদী। এই অঞ্চলটি কৃষিকাজে অত্যন্ত উন্নত। এই অঞ্চলকে জেলা ও মধ্যবর্তী দোয়াব হিসাবে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন –

(i) মুর্শিদাবাদ রাঢ়  (ii) বীরভূম-বর্ধমান রাঢ়  (iii) বাঁকুড়া রাঢ়  (iv) মেদিনীপুর রাঢ়

(4) উপকূলের বালুকাময় সমভূমি

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল ভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। সর্বদক্ষিণের উপকূলবর্তী তটভূমি বালুকাময়। এখানকার তটভূমির ঢাল খুবই কম। এখানে বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি দেখা যায়। তটভূমির উত্তর দিকের বালিয়াড়িগুলি সমুদ্র উপকূলের সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। দুটি বালিয়াড়ির মাঝের নিচু অংশে জলাভূমি দেখা যায়। এই সমভূমি নদীপ্রবাহ ও বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বাহিত বালি ও কাদায় গঠিত। উপকূল অঞ্চলের সমান্তরালে বালিয়াড়ি ও জলাভূমি দেখা যায়। দিঘা বালিয়াড়ি বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে কাছে এবং কাঁথি বালিয়াড়ি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। কোথাও কোথাও সমুদ্র থেকে বালিয়াড়িগুলির দূরত্ব 15-16 কিলোমিটার এবং উচ্চতা 11-12 মিটার।

 (5) গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল 

এই বদ্বীপ অঞ্চলটি পূর্বদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে পশ্চিমে কান্দি মহকুমা বাদে সমগ্র মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগণা জেলা এবং বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের 50 মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর বিস্তৃত। এই অঞ্চলের উত্তরে পদ্মা নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর উপস্থিত। সমগ্র অঞ্চলটি সমতল হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের একটি অংশ। গঙ্গা বা পদ্মা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই প্রভৃতি নদনদী বাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে কালক্রমে সমুদ্রবক্ষ থেকে এই নতুন ভূভাগ বা বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে।

 (6) সুন্দরবন অঞ্চল

দক্ষিণ 24 পরগনার দক্ষিণাংশ এবং উত্তর 24 পরগনার দক্ষিণ পূর্বাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত, তাই এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনোও চলছে। সুন্দরবনের নদীগর্ভ ছাড়া সমস্ত অংশই সমতল। সমুদ্রতল থেকে এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা মাত্র 3-4 মিটার হওয়ায় এর অনেকটাই সমুদ্রজলের জোয়ারে ঢেকে যায়। সুন্দরবন অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের 102টি ছোটো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। 48টি দ্বীপ এ মানুষ এর বসতি রয়েছে। এই অঞ্চল এর মাটি লবনাক্ত ও কাদা প্রকৃতির। এই অঞ্চলে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে। সুন্দরী গাছের উপস্থিতির কারণে সুন্দরবন নামকরণ হয়েছে।মাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 10-40 মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই অঞ্চলে গঙ্গা প্রধান নদী হলেও অসংখ্য নদী আছে যেমন কালিন্দী,রায়মঙ্গল, মাতলা, বিদ্যাধরী ইত্যাদি। এছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত রয়াল বেঙ্গল টাইগার এই অঞ্চলের ই সম্পদ।

গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (1) মুমূর্ষ বদ্বীপ, (2) পরিণত বদ্বীপ ও (3) সক্রিয় বদ্বীপ।

(1) মৃতপ্রায় বা মুমূর্ষ বদ্বীপ: নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার এই বদ্বীপ অংশে নদীগুলো গঙ্গা বা পদ্মা থেকে বিছিন্ন হয়ে মৃতপ্রায় হওয়ায় এই অঞ্চলের বদ্বীপ গঠন আর সম্ভব নয়। এই অঞ্চলকে বাগড়ি অঞ্চল বলা হয় । এখানে তাই প্রচুর বিল, জলাভূমি ও অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।

(2) পরিণত বদ্বীপ: ছোটনাগপুরের মালভূমি থেকে নদীবাহিত প্রচুর বালি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি জমে বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলী জেলায় এই বদ্বীপ অঞ্চলের গঠন প্রায় শেষ হয়েছে। তাই এখানে জলাভূমির সংখ্যা অনেক কম এবং মৃত্তিকাও বেশ কঠিন।

(3) সক্রিয় বদ্বীপ: উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগণা এবং কলকাতা জেলার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলে নদী ও সমুদ্র বাহিত পলি দিয়ে বদ্বীপ গঠনের কাজ আজও চলছে। সমুদ্রের জোয়ারের প্রভাবে এখানকার মৃত্তিকা কিছুটা লবণাক্ত।

 

ADDA247 Bengali Homepage Click Here
ADDA247 Bengali Study Material Click Here

WBCS Mahapack PRO

Adda247 ইউটিউব চ্যানেল – Adda247 YouTube Channel

Adda247 টেলিগ্রাম চ্যানেল – Adda247 Telegram Channel

Sharing is caring!

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপ, মানচিত্রে ভূমিরূপগুলির বিন্যাস- (Geography Notes)_5.1

FAQs

পশ্চিমবঙ্গের অববাহিকা কবে গঠিত হয়?

এই অববাহিকাটি দেশের তিনটি টেকটোনিক বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে। গভীর অববাহিকা গঠন শুরু হয় যখন লেট ক্রিটেসিয়াস অরোজেনি বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে আরাকান ইয়োমা পর্বতমালার উত্থান ঘটায় এবং আসাম উপসাগর গঠন করে।

বঙ্গ অববাহিকা কোথায় অবস্থিত?

ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশের বেঙ্গল অববাহিকা, পশ্চিম ও উত্তরে ভারতীয় ঢাল এবং পূর্বে ইন্দো-বর্মন রেঞ্জের মধ্যে, বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশ এবং বঙ্গোপসাগরকে জুড়ে রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ ও নেপাল সীমান্তে কোন পাহাড় রয়েছে ?

পশ্চিমবঙ্গ ও নেপাল সীমান্তে সিঙ্গলিলা রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এর নাম কী ?

সান্দাকফু হল পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি ?

পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল গোর্গাবুরু।

পশ্চিমবঙ্গের কোথায় বালিয়াড়ি দেখা যায় ?

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় সমভূমিতে বালিয়াড়ি দেখা যায়।

রাঢ় সমভূমির ভূপ্রকৃতি তরঙ্গায়িত প্রকৃতির ?

রাঢ় সমভূমির ভূপ্রকৃতি কি প্রকৃতির।

তরাই শব্দের অর্থ কী ?

তরাই শব্দের অর্থ স্যাঁতসেঁতে ভূমি।

শুশুনিয়া পাহাড় কোন জেলায় অবস্থিত ?

শুশুনিয়া পাহাড় পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত।